বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

চার বছরের শিশু ও বৃদ্ধার শরীরে এসিড নিক্ষেপ, স্বামীর ভিটে থেকে উচ্ছেদ

চার বছরের শিশু ও বৃদ্ধার শরীরে এসিড নিক্ষেপ, স্বামীর ভিটে থেকে উচ্ছেদ

কলাপাড়া প্রতিনিধি:
চার বছরের শিশু মাছুম এখন ১৭ বছরের যুবক। তার বাম হাত, গলা ও মুখমন্ডলে এখনও ক্ষত চিহ্ন। ১৩ বছর আগে ঘুমন্ত অবস্থায় যখন তার গায়ে এসিড নিক্ষেপ করা হয় তখন সে ছিলো চার বছরের শিশু। তার সাথে ঘুমন্ত অবস্থায় নানী গোলভানুর শরীরে এসিডে ঝলসে গেলেও সাত বছর আগে এসিডের দগদগে ক্ষত নিয়ে বিচার না দেখেই তার মৃত্যু হয়। মা ও শিশু সন্তানের শরীরে এসিড নিক্ষেপ করলেও এসিড নিক্ষেপ কারীদের অব্যাহত হুমকিতে থানায় মামলা করতে পারেনি বিধবা নিলুফা বেগম। পাঁচ সন্তান নিয়ে স্বামীর ভিটা ছেড়ে তাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে সাড়ে ১৩ বছর। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আক্কেলপুর গ্রামের এ ঘটনার বিচার চেয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর কলাপাড়া থানায় মামলা রুজু করার পর আবার জীবননাশের হুমকির সম্মুখীন নিলুফা বেগম।
সোমবার সকাল ১১টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে গত সাড়ে ১৩ বছর পাঁচ সন্তান নিয়ে পালিয়ে থাকার কষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিলুফা বেগম। শুধু তাই না, স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটাও এখন দখল হয়ে গেছে তার। জীবনের শেষলগ্নে এসে স্বামীর ভিটা রক্ষা ও সন্তান ও মায়ের উপর এসিড নিক্ষেপের বিচার দেখে যাওয়ার ইচ্ছা।
লিখিত বক্তব্যে নিলুফা বেগমের পক্ষে বোনের মেয়ে মোসাঃ মরিয়ম বলেন, ২০০৬ সালের ১ মার্চ রাতে ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় চার বছরের শিশু মাছুম ও নিলুফা বেগমের মা গোলভানুর উপর এসিড নিক্ষেপ করে। পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর হাওলাদার, সেলিম হাওলাদার, আঃ আজিজ শরীফ, হাবিব ফকির, আঃ মজিদ শরীফ ও খালেক পাহোলান এ এসিড নিক্ষেপের সাথে জড়িত। শুধু তাই না, শিশু সন্তান ও মায়ের চিকিৎসার জন্য সে যখন হাসপাতালে, তখন এই সুযোগে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ঘর থেকে নামিয়ে দেয়। লুট করে নিয়ে যায় ঘরের মালামাল। কেটে ফেলে বাড়ির চারপাশে রোপন করা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। লুট করে নেয় পুকুরের মাছ। এসিড নিক্ষেপকারীদের অব্যাহত হুমকিতে দীর্ঘ বছর পাঁচসন্তান নিয়ে ঘর ছাড়া থাকায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন নি।
নিলুফা বেগম বলেন, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঢাকায় গিয়ে কাজ করেছেন। ইট ভেঙ্গেছেন। মহিপুরে জেলেদের মাছ বাছাইয়ের কাজ করেছেন তাদের থেকে পালিয়ে। ছেলেরা একটু বড় হওয়ায় তারা কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ রিক্সা চালিয়ে
দিনানিপাত করছেন। ভয় উপেক্ষা করে জীবনের শেষলগ্নে স্বামীর ভিটায় গিয়ে দেখি তা দখল করে হাজীপুরের খালেক পাহলান ঘর তুলেছে। নিজের অধিকার আদায়ে বাড়ির এক কোনে পুকুরের পাশে ছোট্র একটি ঘর তুলে বসবাস শুরু করলেও এখন রয়েছেন হুমকিতে।
তিনি বলেন, মৃত্যুর হুমকি উপেক্ষা করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে আদালত কলাপাড়া থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর হিসেবে নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর কলাপাড়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এ মামলা দায়েরের পরই তাকে আবার হুমকি দিচ্ছেন মামলার আসামীরা। এঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর কলাপাড়া থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে জিডি করেন। বর্তমানে তিনি ও তার সন্তানরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এজন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. আসাদুর রহমান বলেন, যেহেতু দীর্ঘ বছর আগের একটি স্পর্শকাতর মামলা। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech